এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন কিন্তু টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, সিইও আয়মান সাদিক ও একই প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি শিক্ষক মুনজেরিন শহীদকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যেন একটু কঠিনই হবে। এমনকি ইন্টারনেট দুনিয়ায় একটা লম্বা সময় ধরেই তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক পরিচিত এক জুটি আয়মান ও মুনজেরিন। বহুদিন ধরেই ভক্তদের কানাঘুষায় ছিল তাদের প্রেমের খবর।
কিন্তু, এই জুটি কখনোই তাদের সম্পর্ক নিয়ে বাস্তবে মুখ খোলেননি। বরং বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা আয়োজনে আয়মানকে বরাবরই ‘ভাইয়া’ বলে সম্বোধন করতে দেখা গেছে মুনজেরিনকে। তাই বলে তো আর তাদের ভালোবাসায় কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সকল জল্পনা-কল্পনা, গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে বিয়ে করেছেন বর্তমান সময়ে সব মহলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই জুটি।
গতকাল শুক্রবার ১৫ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের মসজিদে তাদের আকদ সম্পন্ন হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা ও আয়মান-মুনজেরিনের ঘনিষ্ঠজনেরা। বিয়ের খবর শুরু থেকেই অনেকটা গোপন রাখতে চেয়েছিলেন এই তারকা জুটি। কয়েকদিন আগেই তাদের বিয়ের একটি কার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও আয়মান-মুনজেরিন নিশ্চুপই ছিলেন পুরো সময়জুড়ে।
তবে শুক্রবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে সেই খবর শেয়ার করে নিয়েছেন এই নবদম্পতি। গতকাল শুক্রবার মুনজেরিনের জন্য পুরোপুরি ভিন্ন একটা দিন ছিল। তার ভাষায়, জীবনে কত ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু এরকম কিছুর জন্য কি সত্যিই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল?
এ সময় মুনজেরিন বললেন, ‘আমরা বিয়েটা সবসময় মসজিদেই করতে চেয়েছিলাম। এই সিম্পলিসিটি, শান্ত পরিবেশ সবকিছুই কল্পনা করেছিলাম। কিন্তু এই নার্ভাসনেস কখনোই কল্পনা করিনি।’ একই চিত্র ছিল আয়মানের ক্ষেত্রেও। বিয়ের রেজিষ্ট্রি খাতায় সাইন করতে গিয়ে হাত কেঁপেছিল টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার। আয়মানের ভাষায়, জীবনে অনেক সাইন করেছি। কিন্তু কখনো হাত কাঁপেনি।
আকদ সম্পন্নের পর আয়মান বললেন, ‘এই অনুভূতিটা নতুন। একটু অদ্ভুত।’ এরপর মুনজেরিনকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জীবনের নতুন এক যাত্রা, ভয় পাচ্ছো? স্ত্রীর সরল উত্তর, ‘নাহহহ, এক্সাইটেড (হাসি)।’ মুনজেরিনের হাসিতে আয়মানও বলে উঠলেন, ‘লেটস ডু দিজ পার্টনার’। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিয়ে করছেন আয়মান-মুনজেরিন’ এ সংক্রান্ত একটি খবর ছড়িয়েছে।
এ নিয়ে নেটিজেনদের মাঝে দেখা দিয়েছে হৈ-চৈ। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা হওয়ার কথা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি কার্ডে দেখা যায়, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তায়েবুর রহমান ও শারমিন আক্তারের পুত্র আয়মান সাদিক এবং শহীদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও মনোয়ারা শহীদের কন্যা মুনজেরিন শহীদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার কথা রয়েছে।
কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া আয়মান সাদিক একজন বাংলাদেশি শিক্ষা উদ্যোক্তা এবং ইন্টারনেট ব্যক্তিত্ব। তিনি ২০১৫ সালে ‘১০ মিনিট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটা এমন এক প্রতিষ্ঠান, যা অনলাইনে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য এবং সহযোগিতা বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। এ প্রতিষ্ঠান মূলত ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞানের নানা বিষয়, যা একাডেমিক সিলেবাসের আওতাভুক্ত এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দক্ষতা কিভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে ভিডিও তৈরি করে। আয়মান সাদিক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র ছাত্র।
মুনজেরিন শহীদের জন্ম চট্টগ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। এখন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতভাগ বৃত্তি নিয়ে ইংরেজিতে দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর করছেন। মুনজেরিন শহীদ মূলত আলোচনায় আসেন ‘১০ মিনিট স্কুল’র একজন শিক্ষিকা হিসেবে। তিনি এই প্লাটফর্মে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিখিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।